Open in alternate window

কিতাবুল অহী

হাদীছ নং ১




হযরত আলকামা ইবনে ওয়াক্কাছ লাইছী বলেন,আমি শুনেছি,ওমর ইবনে খাত্তাব(রাঃ)মসজিদের মিম্বরে উঠে বলেছিলেন,আমি রাসুলুল্লাহ(সঃ)কে বলতে শুনেছি,সকল কাজই নিয়ত অনুযায়ী হয়। আর প্রত্যেল ব্যক্তি যা নিয়ত করে, তাই পেয়ে থাকে।কাজেই যার হিজরত দুনিয়া লাভ বা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য হয়েছে,তার হিযরত তদোদ্দেশ্যেই হয়েছে।

হাদীছ নং ২





হযরত উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণীত,হারেছ ইবনে হেশাম রাসুলুল্লাহ(সঃ)কে প্রশ্ন করলেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ!আপনার মিকট অহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ(সঃ) ফরমান,অহী কখনো ঘন্টার শব্দের মত আসে। আর আমার কাছে কস্টদায়ক অহী।(ফেরেস্তা) যা বলে,তা শেষ হওয়া মাত্রই আমি তা আয়ত্ব করি। আবার কখনো ফেরেস্তা মানুষের আকৃতিতে এসে যে অহী বলেন,আমি তা তখনোই আয়ত্ব করে নেই।
হযরত আয়েশা(রাঃ)বলেন, আমি দারুন শীতেও রাসুলুল্লাহ(সঃ)এর উপর অহী আসার পর তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরতে দেখেছি।

হাদীছ নং ৩





হযরত উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা(রাঃ)বলেন,রাসুলুল্লাহ(সঃ)এর নিকট প্রথমে যে অহী আসত,তা ছিল নিদ্রাবস্থায় তাঁর সত্য স্বপ্ন।তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন,তা দিবালোকের মত প্রকাশ পেত। কিছুদিন অতিক্রান্তের পর তাঁর নিকট নির্জন জীবন প্রিয়তর হয়ে উঠল।তাই তিনি হেরা পর্বত গুহায় গিয়ে নির্জন বাস শুর করলেন।নিজ পরিবারের নিকট না থেকে কয়েক রাত পর্যন্ত আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকতেন।এই উদ্দ্যশ্যে সাথে তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন।কয়েকদিন পর বিবি খাদীজার নিকট ফিরে এসে পুনরায় কয়েকদিনের জন্য কিছু খাদ্য সাথে নিয়ে যেতেন।
এভাবে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট প্রকৃত সত্য(অহী)আগমন করল।হযরত জীবরাঈল ফেরেস্তা তাঁর নিকট আগমন করে বললেন,"ইকরা"। নবী করিম(সঃ) বলেন, আমি বললাম,আমিত পড়তে পারিনা।তিনি বলেন,তখন ঐ ফেরেস্তা আমাকে এত জোরে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন যে,তাতে আমার কষ্টাবোধ হল।তখন ফেরেস্তা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,পড়ুন।তিনি বলেন,আমি বললাম,আমিত পড়তে পারিনা।তখন তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে সজোরে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন,তাতে আমার কষ্টবোধ হল।পরে তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে (পুনরায়)বললেন,পড়ুন।আমি বললাম,আমিত পড়তে পারিনা।তিনি বলেন,অতপর ফেরেসতা তৃতীয়বার আমাকে ধরে (এমন)দৃঢভাবে আমাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন যে,আমি ভীষন কষ্টাবোধ করলাম।অতপর তিনি আমাকে আলিঙ্গনমুক্ত করে দিয়ে পাঠ করলেনঃ"ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক,খালাকাল ইনসানামিন আলাক্ব,ইকরা ওয়া রাব্বুকাল আকরাম..
অর্থাৎ আপনি আপনার সেই রবের নামে পড়ুন যিনি সৃষ্টি করেছেন।যিনি মানুষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন।পড়ুন। আর আপনার রব সর্বাধিক সম্মানিত।
রাসুলুল্লাহ(সঃ) এই আয়াত গুলো হৃদয়ঙ্গম করে ঘরে ফিরলেন।তাঁর হৃদয় তখন(ভয়ে)কম্পমান ছিল।তিনি খাদীজা বিনতে খু্যাইলিদের নিকট এসে বললেন,আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক,আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক।তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন।পরে কিছুটা প্রকৃতিস্থ হয়ে তিনি সব ঘটনা হযরত খাদীজার(রাঃ)নিকট বিবৃত করলেন এবং বললেন,আল্লার কশম, আমি আমার জীবন সম্পর্কে সংশয়বোধ করছি। খাদীজা(রাঃ) তাকে আশ্বস্ত করে বললেন না, ভয়ের কোন কারন নেই। আল্লার কশম তিনি কখনই আপনাকে অপদস্ত করবেন না। কেননা আপনি আপনার আত্বীয়স্বজনদের সাথে সদ্ব্যহার করেন,দুঃস্থ দুঃখীদের সেবা করেন,বঞ্চিত ও অভাবীদের কে আয়ের ব্যবস্থা করে দেন। অতিথি সৎকার করেন,সত্যপথের বিপন্ন পথিকদের কে সাহয্য করেন। অতপর হযরত খাদীজা (রাঃ) তাকে সাথে করে স্বীয় পিতৃব্য পুত্র ওরাকা ইবনে নওফলের নিকট গেলেন। তিনি অন্ধকার যুগে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লার ইচ্ছামাফিক ইঞ্জিলের অনেকাংশ ইবরানী ভাষায় অনুবাদ করতেন। তিনি এত অধিক বার্ধক্যে পৌঁছেছিলেন যে,প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাকে বললেন, হে পিতৃব্য পুত্র! তোমার ভাতুস্পুত্রের কথা শোন। ওরাকা ইবনে নওফল তাঁকে বললেন, হে ভাতুষ্পুত্র! কি দেখেছ? রাসুলুল্লাহ (সঃ) সব ঘটনা বিবৃত করলেন। ওরাকা তাঁকে বললেন, ইনি সেই রহস্যময় জিবরাইল ফেরেস্তা যকে আল্লা মুসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আহা! যদি আমি সেই সময় যুবক থাকতাম যেদিন আপনি আল্লার বানী প্রচার করবেন,হায়! যদি আমি সেই সময় জীবিত থাকতাম, যে সময় আপনার জাতী আপনাকে দেশান্তরীত করবে। রাসুলুল্লাহ(সঃ) বললেন, তারা কি আমাকে সত্যিই দেশান্তরিত করবে? তিনি বললেন,হ্যাঁ, আপনি যা নিয়ে এসেছেন, এরূপ বস্তু যিনিই নিয়ে এসেছেন,তাঁর সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে।আমি আপনার যুগ পেলে আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করব।তার কিছুদিন পরেই ওরাকা ইন্তেকাল করেন এবং ওহীও কিছুদিন বন্ধ থাকল। ইবনে শিহাব যুহারী বলেন,আবু সালামাহ ইবনে আবদুর রহমান বলেছেন, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) অহী বন্ধ থাকা অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন,একদা আমি পথ চলার সময় ঊর্ধ্ব দিকে একটি শব্দ শুনলাম।তখন আমি ঊর্ধ্ব দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম,হেরা গুহায় যিনি আমার নিকট এসেছিলেন,সেই ফেরেসতা আসমান ও যমিনের মাঝখানে এক কুরসিতে বসে আছেন। এতে আমি ভীত হয়ে গৃহে ফিরলাম এবং বললাম, আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত কর,আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত কর। তখন আল্লাহ নাযিল করলেনঃ হে চাদরাবৃত ব্যাক্তি উঠ, আর তুমি সতর্ক কর,আর তোমার প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা কর, তোমার কাপড় পবিত্র কর,অপবিত্রতা পরিহার কর। এর পর হতে অহী একের পর এক অবতীর্ন হতে লাগল।

হাদীছ নং ৪



হযেত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে "লা তুহার্রিক বিহী লিসানাকা লি তা'জালা বিহী,,," আয়াত সম্পর্কে বর্নিত আছে, (তিনি বলেন) রাসুলুল্লাহ (সঃ) অহী আয়ত্ব জরার উদ্দেশ্যে বিশেষ কষ্ট সহকারে বারবার পাঠ করতেন এবং জিবরাইল যখন পড়তেন তখন দুঠোট বারবার বেশী করে নাড়তেন।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি তোমাকে বুঝাবার জন্য রাসুলুল্লাহ (সঃ) যেভাবে তাঁর দু ঠোট নাড়তেন সে ভাবে আমার ঠোট নাড়ছি।সাঈদ ইবনে জুবায়ের বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)কে যেভাবে ঠোট নাড়তে দেখেছি,সেভাবে আমার ঠোট নাড়ছি।তারপর তিনি স্বীয় ঠোট দুটি নাড়লেন।এ সম্পর্কে আল্লাহ আয়াত নাযিল করলেন," আপনি ওহী শীঘ্র মুখস্থ করার জন্য ঠোঁট নাড়াবেন না।নিশ্চয়ই অহী আপনার আয়ত্বে রাখা ও তা আপনাকে পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়ীত্ব আমার। অতএব আমি যখন আমার অহী পড়ি, তকন আপনি সেই পঠনের অনুসরন করুন।তারপর তা বর্ননা করার দায়ীট্বও আমার।এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সঃ) জিবরাইলের সাথে সাথে অহী পাঠ বন্ধ করে দিলেন।কেবল মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং জিবরাইল চলে গেলে তিনি তদনরুপই পড়তেন। একটি অক্ষরও এদিক-ওদিক হতনা।

হাদীছ নং ৫



হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন,রাসুলুল=লাহ (ছ) মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ছিলেন।আর রমযান মাসে যখন জিব্রাইল (আ) আগমন করে তার সাথে সাক্ষাত করতেন,তখন তিনি বেশী দাতা হতেন।রমযানের প্রতি রাতেই জিব্রাইল (আ) টার সাথে সাক্ষাত পুনরাবৃত্তি করটেন।(ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন)নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (ছ) এ সময় বদান্যতার দিক দিয়ে মুক্ত বায়ু অপেক্ষাও অধিক উপকারী হতেন

হাদীছ নং ০৬


হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবু সফিয়ান বলেছেন, তিনি ব্যবসায় উপলক্ষে সিরিয়া ছিলেন।তার সাথে মক্কার কোরাইশদের আরো অনেক ব্যবসায়ী দল ছিল।এ সময় রাসুলুল্লাহ (সঃ) আবু সুফিয়ান ও কোরাইশদের সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ চিলেন। তিনি বলেন, এ সময় হঠাৎ একদিন রোম সম্রাট হেরাক্লি্যাস আমাদেরকে আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন।তিনি তখন ইলিয়া শহরে জেরুজালেম দরবারে বসা ছিলেন।তার পাশে রোম প্রধানরা বসা ছিলেন। দোভাষীর মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু হল। হেরাক্লিয়াস দোভাষীর মাধ্যমে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,আরব দেশে যে লোকটি নবুয়ত দাবী করেছে,তোমাদের মধ্য থেকে বংশের দিক দিয়ে কে তার ঘনিষ্ঠতম? আবু সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, আমিই তার বংশের দিক দিয়ে বেশী ঘনিষ্ঠতম।হেরাক্লিয়াস তখন বললেন,এ ব্যক্তিকে আমার নিকটে বসাও, আর তার সাথীদেরকে ও নিকটেই তার পিছনে বসটে দাও।তারপর হেরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেন, তুমি তাদের কে বল,আমি তার নিকট নবুয়তের দাবীদার লোকটি সম্বন্ধে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করব।এ ব্যাক্তি মিথ্যা বললে, তারা যেন সে মিথ্যা কথা আমাকে ধরিয়ে দেয়। আল্লার কশম, আমাকে আমার সাথীদের নিকট মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হওয়ার লজ্জা বাধা না দিলে আমি রোম সম্রাটের নিকট অবশ্যই মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতাম।
প্রশ্নোত্তর
হেরাক্লিয়াসঃ ঐ লোকটির জম্ম কিরুপ বংশে?
আবু সুফিয়ানঃ উত্তম ও উচ্চ বংশে।
হেরাক্লিয়াসঃ এরুপ কথা অর্থাৎ নবুয়তের দাবী তোমাদের বংশে এর পুর্বে কখনো কেউ করেছে কি?
আবু সুফিয়ানঃ না
হেরাক্লিয়াসঃ তার পিতা-পিতামহ প্রভৃতিদের মধ্যে কেউ কোন রাজা বাদশাহ ছিল কি?
আবু সফিয়ানঃ না
হেরাক্লিয়াসঃ প্রভাবশালী লোকেরা তার দলভুক্ত হয় বেশী, না দুর্বলেরা?
আবু সফিয়ানঃ অভাবগ্রস্থ- দুর্বলেরা।
হেরাক্লিয়াসঃ তার দলভুক্ত লোকের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে?
আবু সুফিয়ানঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হেরাক্লিয়াসঃ কেউ তার ধর্ম গ্রহনের পর তার কোন দোষ ত্রুটি দেখিয়ে আবার তা পরিত্যাগ করে কি?
আবু সুফিয়ানঃ না
হেরাক্নিয়াসঃ নবুয়ত দাবী করার পুর্বে এ লোকের উপর তোমরা কখনো মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ এনেছ কি?
আবু সুফিয়ানঃ না
হেরাক্লিয়াসঃ এলোক কি কখনো কোন ওয়াদা ভঙ্গ করেচেন?
আবু সফিয়ানঃ না, তবে আমরা সম্প্রতি তার সাথে একটি সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ আছি।জানিনা সে চুক্তির ব্যাপারে সে কি করে।আবু সুফিয়ান বলেন যে,এ কথাটি ছাড়া তাকে বলার মত আর কোন কথা আমি পেলাম না।
হেরাক্লিয়াসঃ তার(দলের) সাথে তোমাদের যুদ্ধ হয়েছে কি?
আবু সুফিয়ানঃ হ্যাঁ যুদ্ধ হয়েছে।
হেরাক্লিয়াসঃ তার ফলাফল কেমন হয়েছে?
আবু সুফিয়ানঃ যুদ্ধ হয়েছে বালতিতে পালা করে পানি উত্তোলন করার মত,কখনো তারা পেয়েছে, কখনো আমরা পেয়েছি,( অর্থাৎ কোন যুদ্ধে তারা জয়লাভ করেছে, কোন যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করেছি)
হেরাক্লিয়াসঃ তিনি তোমাদেরকে কি কি নির্দেশ দেন?
আবু সুফিয়ানঃ সে আমাদেরকে বলে,(এক) আল্লাহর ইবাদত কর,তাঁর সাথে কাউকে শরিক করোনা,তোমাদের পিতা- পিতামহদের কথা ত্যাগ কর,আর সে নাময পড়তে, যাকাত দিতে, সত্য কথা বলতে,পবিত্র থাকতে,ওয়াদা পালন করতে,আমানত আদায় করতে ও সমাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করে।আবু সুফিয়ান বলেন, অতঃপর হেরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেন,তাকে বল, আমি তোমাকে তাঁর বংশ সম্র্কে জিজ্ঞেস করায় তুমি বললে,তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশজাত।নবীদেরকে এমন সম্ভ্রান্ত বংশেই পাঠানো হয়।আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম,তাঁর পুর্বে তোমাদের মধ্যে কি কেউ এরুপ কথা বলেছে?তুমি বলেছ, না। আমি তাঁর পুর্বে এরুপ কথা বলে থকলে বুঝতাম যে,এ ব্যাক্তি তাদের কথারই পুনরাবৃত্তি করছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশা ছিল কিনা? তুমি বলেছ,না, ছিলনা। আমি বলি তাঁর বাপ দাদাদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশা থাকলে বলতাম যে, তিনি তাঁর পুর্বপুরুষদের রাজ্য পুনরুদ্ধারাকাঙ্খী।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,তোমরা তাঁর এ ধরনের উক্তির পুর্বে তাঁর উপর মিথ্যার অপবাদ দিয়েছ কি?তুমি বলেছ, না।আমি বুঝলাম যে, তিনি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা ত্যাগ করেন আল্লার ব্যাপারে মিথ্যায় লিপ্ত হন এটা অবান্তর।আমি জিজ্ঞেস করলাম,প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর বেশী অনুগত হচ্ছে না দুর্বলেরা? তুমি বলেছ, দুর্বলেরা। এরপ লোকেরাই নবীদের অনুগত হয়ে থাকে।আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম তাঁর অনুগতদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?তুমি বলেছ, বাড়ছে। ঈমানের ব্যাপারটি পূর্নতা লাভের সময় পর্যন্ত এরুপই হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেউ কি তাঁর ধর্মে প্রবেশের পর তার কোন দোষত্রুটির কারনে আবার তা পরিত্যাগ করে? তুমি বলেছ,না। ঈমানের আলোর বলিষ্ঠতা অনতরে বসে গেলে এরুপই হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি ওয়াদা ভঙ্গ করেন? তোমি বলেছ, না। নবী রাসুলগন এমনই ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তোমাদেরকে কি কি করতে বলেন?তুমি বলেছ, তিনি একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে আর তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করতে বলেন। তিনি পৌত্তলিকতা থেকে বারন করেন। তোমাদেরকে নামায আদায় করতে,সত্য কথা বলতে,নিষিদ্ধ বিষয় থেকে পবিত্র থাকতে নির্দেশ দেন। তুমি যা বলেছ,তা সত্য হলে তিনি অচিরেই আমার দুপায়ের নিচের যমীনের অধিকারী হবেন। আমি জানতাম তিনি আবির্ভুত হবেন,কিন্তু তোমাদের মধ্য থেকে যে তিনি আত্বপ্রকাশ করবেন তদ্রুপ ধরনা করিনি।আমি তাঁর কাছে পৌছতে পারব বলে জানলে তাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য ক্লেশ বরন করতাম। আর আমি তাঁর নিকটে থাকলে,নিশ্চয় তাঁর চরনযুগল ধুয়ে দিতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ(সঃ)দেহিয়া কলবীর মাধ্যমে বসরার শাসনকর্তার নিকট যে পত্রখানা পাঠিয়েছিলেন, তা আনতে বললেন।বসরার শাসনকর্তা তা হেরাক্লিয়াসের নিকট পাঠিয়েছিলেন।
হেরাক্লিয়াস পত্রখানা পড়লেন।তাতে লিখিত ছিল; কৃপা অ করুনাময় আল্লার নামে।আল্লার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের নিকট থেকে রোম অধিপতি হেরাক্লিয়াসের নিকট।হেদায়েতের অনুসারির উপর শান্তি বর্ষিত হউক।
অতপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি।ইসলাম গ্রহন করুন, শান্তি লাভ করবেন।আল্লাহ আপনাকে দিগুন পুরষ্কার দিবেন।আপনি এ আহবান কবুল না করলে আপনি সমগ্র প্রজার পাপের ভাগি হবেন।আর হে কিতাবের অনুসারিরা তোমরা সে বানীর দিকে আস,যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে একইরুপ------ আমরা আল্লার ইবাদত করব,তার সাথে কাউকে শরিক করবনা।য়ামাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে রব বলে গ্রহন করবনা।যদি তারা এ বানি গ্রহন না করে তোমরা বলে দাও যে, তোমরা স্বাক্ষী থাক,আমরা মুসলমান।আবু সুফিয়ান বলেছেন,যখন হেরাক্লিয়াস তার বক্তব্য প্রকাশ করে পত্র পড়লেন,তখন তার সামনে খুবই শোরগোল ও কোলাহল শুরু হল।আমাদেরকে বের করে দেয়া হল।আমি সঙ্গীদেরকে বললাম,আবু কাবশার পুত্রের ব্যাপারটা যে খুবই গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে।তাকে বনু আসফারের রোমাধিপতি ও ভয় করছে।তখন থেকে আমার বিশ্বাস জম্মাল যে,সে শ্রীঘ্রই জয়যুক্ত হবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে ইসলামে প্রবেশ করালেন।তখন বায়তুল মুকাদ্দাসের শাসন কর্তা ছিলেন ইবনে নাতুর এবং হেরাক্লিয়াস ছিলেন সিরিয়ার খৃষ্টানদের পাদ্রী।ইবনে নাতুর বললেন, একদা প্রত্যুষে হেরাক্লিয়াস বায়তুল মুকাদ্দাসে বিমর্ষ চেহারায় উপস্থিত হলেন,তখন তার এক বিশিষ্ঠ সভাসদ বলল,আপনাকে যে বড় বিমর্ষ দেখছি।

কিতাবুল ঈমান

হাদীছ নং ৭



হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) থেকে বর্ণীত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেনঃ পাঁচটি ভিত্তির উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত।(১)
সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লা ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ(সঃ) আল্লাহর রাসুল।(২) নামায কায়েম করা (৩)যাকাত দেয়া (৪)হজ্ব আদায় করা এবং (৫) রমজানের রোকা রাখা।

কিতাবুল ইলম

হাদীছ নং ৫৫



হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালি(রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ(সঃ)(যথারীতি)নাময কায়েম,যাকাত আদায়,এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যান কামনার (ওয়াদায়) বাইয়াত করেছি।

হাদীছ নং ৫৬



হযরত ইবনে আলাকা(রাঃ)কর্তৃক বর্নিত।তিনি বলেন মুগীরা ইবনে শো'বার মৃত্যুর দিন জারীর ইবনে আবদুল্লাহ(রাঃ)কে দাড়ানো অবস্থায় বলতে শুনেছি,তিনি আল্লাহর প্রসংশা এবং গুনগানের বললেন,আল্লাকে ভয় করা তোমাদের অবশ্যই কর্তব্য। তিনি এক,তাঁর কোন শরীক নেই।তোমাদের আসা পর্যন্ত শান্ত এবং ধীরস্থির থাকা উচিৎ।সে আমীর একনই আসবেন। তারপর তিনি বললেন,তোমরা তোমাদের আমীরের জন্য আল্লার কাছে ক্ষমা চাও। কেননা তিনি ক্ষমা ভালবাসেন।তারপর তিনি বললেন,আমি নবী(সঃ)এর কাছে বললাম,আমি আপনার নিকট ইসলামের উপর বাইয়াত নিতে চাই।তখন তিনি সমস্ত মুসলমানের কল্যান কামনার শর্ত দিলেন। আমি সেই বায়াত হয়েছিলাম।আর এ মসজিদের প্রভু আল্লাহর শপথ,আমি তোমাদের কল্যান কামনা করি।অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন এবং আসন হতে নামলেন।

কিতাবুল অযু

কিতাবুল অযু

হাদীছ নং ১৩২



হযরত আবু হুরাইরা(রাঃ)থেকে বর্নিত,তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ(সঃ) ফরমাইয়েছন,যে ব্যক্তি হদছ করে,তার নামায কবুল হয়না,যতক্ষন না সে অযু করে।হাযরা-মাওতের এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল,হে আবু হুরাইরা! হদছ কি?তিনি বললেন নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু ত্যাগ করা।

কিতাবুল গোসল

হাদিছ নং ২৪১

নবী পত্নী হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নবী (সঃ) যখন জানাবতের গোসল করতেন, তখন শুরুতে দুহাত ধুতেন।পরে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করে অঙ্গুলিগুলি পানিতে ডুবিয়ে তা দ্বারা চুলের গোড়া খেলাল করতেন।তারপর দুহাত দিয়ে তিন অঞ্জলি পানি মস্তকে ঢেলে তারপর সর্বশরীরে পানি প্রবাহিত করে দিতেন।